আমাদের চুল লম্বা হোক কিংবা ছোট হোক কম বেশি সবাই চুলে স্টাইল করতে পছন্দ করেন। বিশেষ করে বিয়ের অনুষ্ঠান অথবা ঘরোয়া কোন পার্টি সবাই চায় সবাই চায় চুলটি একটু ভিন্নভাবে বাঁধতে। আপনার সুন্দর হেয়ার স্টাইল বদলে দিতে পারে আপনার পুরনো লুক। তাই চুল আমাদের শরীরের সবার বিশেষ একটা অঙ্গ। চুল পড়ে যাওয়ার কারনঃ সাধারণত চুল পরে যাওয়ার অনেক কারণ থাকে তবে বিশেষ কিছু কারণ আছে যা আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলঃ ১) পারিবারিক ইতিহাসঃ যদি আপনার বাবা অথবা মায়ের কম বয়সে চুল পেকে গিয়ে থাকে, তবে আপনার ক্ষেত্রেও তা হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। এই ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আসলে আপনার জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের মাঝেই বিদ্যমান থাকে। ৩) হরমোন পরিবর্তনঃ কয়েক বছর আগের অথবা কয়েক মাস আগের নিজের একটা ছবি দেখলেই আপনি খুব সহজে বুঝতে পারবেন আপনার চুলে সময়ের সাথে পরিবর্তন আসছে। মূলত সময়ের পরিবর্তনের সাথে হরমোনে পরিবর্তন আসে বলেই এসব পরিবর্তন দেখা যায়। সাধারণত চুল পাকার পেছনেও দায়ী এই হরমোন। ৪) অটোইমিউন জটিলতাঃ আমাদের শরীরে অ্যালোপেশিয়া অ্যারিয়াটা নামের একটি অটোইমিউন ডিজিজ আছে যা কিনা আমাদের ত্বক এবং চুলকে প্রভাবিত করে অনেক বেশি। এই জটিলতায় আক্রান্ত মানুষের পুরো মাথা এমনকি পুরো শরীরেই চুল পরে যেতে পারে। ৫) পরিবেশ দূষণের ফলে চুল ঝড়া এবং অকালে পাকার ঝুঁকি বেড়ে যায় ৬) স্ট্রেসের কারণেও চুল ঝড়া বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও আরও বিশেষ কিছু কারণ আছে যে কারণে অল্প বয়সে আপনি হারাচ্ছেন আপনার সুন্দর ও পরিবর্তন হচ্ছে আপনার চুলের • প্রয়োজনীয় পরিমাণে পুষ্টির অভাব • শরীরে থাইরয়েডের সমস্যা • অ্যানিমিয়া এর কারণে • সঠিক যত্নের অভাব ১. ঘুম থেকে উঠে চুল আঁচড়িয়ে নিন ঘুম থেকে উঠে দেখি চুলে জট বেঁধে আছে। তাই ঘুম থেকে উঠার পর চুল আঁচড়ানো খুব জরুরি। চুল আঁচড়ানোর ফলে সারারাত চুলের গোঁড়ায় যে তেল জমে থাকে, তা চুলের মধ্যে ছড়িয়ে যায়। নিয়মিত চুল আঁচড়ালে চুলের গোঁড়ার রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং এতে দ্রুত চুল বাড়ে। তাই নিয়মিত মাথার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ২-৩ মিনিট চুল আঁচড়াতে হবে। ২. চুল ধুয়ে নিন বাইরের ধুলাবালি আর দূষণের কারণে অনেকেই প্রতিদিন চুলে শ্যাম্পু করে থাকেন। প্রতিদিন শ্যাম্পু করার ফলে মাথার ত্বকের প্রাকৃতিক তেলও ধুয়ে যায়। যার ফলে চুল হয়ে যায় রাফ এবং ড্রাই। আবার চুল নিয়মিত ভালো করে না ধুলে কিন্তু খুব বিপদ। চুলের গোঁড়ায় ময়লা জমে খুশকি সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে চুলের ধরণ অনুযায়ী শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুতে হবে। যাদের নরমাল চুল তারা সপ্তাহে ৩বার চুল ধুতে পারেন। যাদের রুক্ষ চুল তারা দু’দিন পরে একবার করে চুল ধুলে ভালো। আবার যাদের তেলতেলে চুল তারা অবস্থা বুঝে ২দিন বা ১দিন পর পরও চুল ধুতে পারেন। চুলে শ্যাম্পু করা না হলেও পানি দিয়ে যাতে স্ক্যাল্প ভালমত পরিষ্কার করা হয় এবং চুলে গরম পানি ব্যবহার করা না হয়, সেই দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। ৩. ভেজা চুলের যত্ন চুলের যত্নে আমাদের আরেকটি ভুল হচ্ছে- গোসলের পর পরই চুল আঁচড়ানো। গোসলের পর নরম তোয়ালে দিয়ে চুল মুছে নিতে হবে। কখনই তোয়ালে দিয়ে চুলে জোরে ঘষা উচিৎ না। জোরে জোরে ঘষলে চুলের আগা ফেটে যায়, চুলের গোড়া নরম হয়ে যায়, এতে চুল পড়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। ভেজা চুল তোয়ালেতে চেপে চেপে চুল মুছবেন, অথবা চুল কিছুক্ষণ পেঁচিয়ে রাখতে পারেন। হালকা শুকিয়ে গেলে তারপর চুল আঁচড়ে নিবেন। ৪. হেয়ার প্রোডাক্ট বাছাই করা চুলের ধরণ বুঝে চুলে প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হয়। নরমাল চুল হলে যেকোনো ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।শ্যাম্পু ভালো করে মাথায় সার্কুলার মোশনে ম্যাসাজ করবেন। রুক্ষ চুল যাদের তাদের চুলকে নমনীয় করে এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত। আর তৈলাক্ত চুলে অয়েল ক্লিয়ার শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত। এছাড়া কন্ডিশনার ব্যবহার করাও উচিত। কিন্তু খেয়াল রাখবেন চুলের স্ক্যাল্পে যাতে কন্ডিশনার না লাগে, এতে চুলের গোঁড়া নরম হয়ে যায় এবং চুল পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার যাতে ঠিকমত পরিষ্কার হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। যাদের চুলে কালার করা বা অন্য কোন হেয়ার ট্রিটমেন্ট নেয়া, তাদের সে অনুযায়ী চুলের জন্য শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার সিলেক্ট করা উচিৎ। ৫. চুলের যত্নে চিরুনি চুলের যত্নে কিন্তু চিরুনিরও অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। দাদী-নানীদের সময়ে কাঠের চিরুনি সব থেকে বেশি ব্যবহার করা হত। দেখা যেত, তাদের চুল ঘন ও কালো ছিল এবং চুলও কম পড়তো। কারণ কাঠের চিরুনি ব্যবহারে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে, স্ক্যাল্পে তৈরী হওয়া তেল পুরো চুলে ছড়িয়ে যায় এবং ময়েশ্চারাইজড থাকে। বর্তমানে প্লাস্টিকের চিরুনি বেশি ব্যবহার হয়। আর প্লাস্টিকের চিরুনি দিয়ে আঁচড়াবার সময় মাথায় তাপ উৎপন্ন করে। যেটি চুলের জন্য ক্ষতিকারক। অতিরিক্ত তাপ স্কাল্প সহ্য করতে পারে না এবং চুল পড়ে। তাই প্রতিদিনে ব্যবহৃত চিরুনি কোনটা ব্যবহার করছি, কী রকম চিরুনি তারদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ৬. রাতে চুলের যত্ন রাতে ঘুমানোর আগেও কিন্তু চুলের যত্ন প্রয়োজন। চাইলে সুন্দর করে একটি পনিটেইল বা বেণি করে নিতে পারেন। চুল খোলা রেখে শুতে যাওয়া ঠিক না। এতে বালিশের সাথে ঘষা লেগে চুল পড়তে পারে। বালিশের কভার সিল্কের হলে খুব ভালো হয়। চুল ভালো রাখতে ঘুমানোর আগে সপ্তাহে ২ বার তেল দিতে পারেন। তেল দিয়ে ম্যাসাজ করে চুলটা আবারও উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ভালো করে আঁচড়িয়ে নিবেন। আপনার চুলের যত্ন কিন্তু প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নেয়া খুব জরুরি। এতে চুল ভালো থাকে এবং চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য যেসব হেয়ার প্যাক বা হেয়ার মাস্কগুলো আপনি ব্যবহার করেন সেগুলো ভালো করে কাজে দিবে। এছাড়া প্রচুর পরিমাণের পানি এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। প্রতিদিনে চুলের যত্নে এই ৬টি বিষয় অভ্যাসে পরিণত করলে চুল নিয়ে থাকবে না কোনো টেনশন। আশা করি, এই ৬টি উপায় আপনার চুলের যত্নে অনেক কিছুর সমাধান দিবে।
Latest Posts
-
চুলের যত্ন
4 May 2021
-
খুশকি থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়
8 May 2021
-
গর্ভকালীন যত্ন
8 May 2021
-
শিশুর ত্বকের যত্নে তেল মালিশ কতটা গুরুত্বপূর্ণ
10 May 2021
-
নবজাতকের যত্ন
10 May 2021